Home DRAFT আহত পুতিন আরও বিপজ্জনক

আহত পুতিন আরও বিপজ্জনক

by বাংলাস্ফিয়ার
5 comments

সুমন চট্টোপাধ্যায়

মরিয়া পুতিন বড় বিপজ্জনক। ইউক্রেন যুদ্ধ যত বেশি দীর্ঘায়িত হচ্ছে, ইউক্রেনের সেনাবাহিনী যে ক্ষিপ্র গতিতে যুদ্ধের গোড়ায় হারানো জমি পুনরুদ্ধার করছে, তাতে রুশ প্রেসিডেন্টের কপালের ভাঁজ আরও যেন গভীর হচ্ছে। সেটাই হচ্ছে অশনি সংকেত।

গত সপ্তাহে খারকিভ অঞ্চল থেকে রুশি ফৌজ ইঁদুরের পালের মতো পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে একথা আর গোপন নেই, গোটা দুনিয়া জেনে গিয়েছে। সেখানে রুশ সীমান্ত থেকে মাত্রই দু’ কিলোমিটার দূরে দাঁড়িয়ে আছে ইউক্রেনের ফৌজ।

খারকিভ থেকে রুশি ফৌজের পলায়ন এখন খোশ-গল্পের খোরাক।পরণের ইউনিফর্ম ছিঁড়ে-খুঁড়ে, হাতের অস্ত্র মাটিতে ফেলে, গেরস্থর কাছ থেকে সাইকেল চুরি করে তাতে চেপে চাচা আপন প্রাণ বাঁচা করতে বাধ্য হয়েছে তাদের অনেকে।প্রায় আড়াই হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকা হাতছাড়া হয়ে গিয়েছে,সেটা বড় কথা নয়। ইউক্রেন যুদ্ধে এমন অপ্রত্যাশিত বিপর্যয় যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে সোজা পুতিনের গালে বারো সিক্কের থাপ্পড়।

বিষয়টি পশ্চিমী মিডিয়ার অপপ্রচার বলেও আর উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছেনা কেননা মস্কোয় উগ্র রুশি জাতীয়তাবাদীরাও এবার ফোঁস করে উঠতে শুরু করেছেন, তাঁরা মনে করছেন সেই ২৪ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া এই যুদ্ধ ভ্লাদিমির পুতিন ঠিক পথে পরিচালিত করতে একেবারে ব্যর্থ হয়েছেন।

তাহলে পুতিন এখন কোন অবস্থায় দাঁড়িয়ে? সাত মাসেও রুশি ফৌজ কাজের কাজ কিছুই করতে পারেনি, ইউক্রেনের তিনটি বড় শহর, কিয়েভ, খারকিভ বা কৃষ্ণ সাগরের তীরের ওডেসা এখনও যথারীতি ইউক্রেন সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সাফল্য বলতে কেবল ডনবাস নিজেদের দখলে নেওয়া। কিন্তু রুশি ফৌজের মনোবল এখন তলানিতে, আক্রমনের বদলে এখন তারা আত্মরক্ষা নিয়ে বেশি দুশ্তিন্তাগ্রস্ত। সংশয়াতীতভাবে যুদ্ধের পাল্লা এখন কিয়েভের দিকেই ঝুঁকে। আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপের বন্ধু দেশগুলির কাছ থেকে ইউক্রেন যে সব অত্যাধুনিক অস্ত্রশস্ত্র পেয়েছে, তার সমতুল সমর ভান্ডার রুশিদের হাতে নেই। ফলত যেটা অনিবার্য ছিল সেটাই হয়েছে, হাজার হাজার রুশি ফৌজ হয় মারা গিয়েছে নতুবা ভয়ঙ্কর রকমের আহত। পুতিনের হাতে ’রিজার্ভ ফোর্স’ বলে কার্যত কিছু নেই। এর অর্থ নতুন করে রুশি যুবাদের ফৌজে এনে দ্রুত তাদের যুদ্ধে যাওয়ার মতো প্রশিক্ষণ দিয়ে ফেলতে হবে। সামরিক লব্জে একে বলা হয় ‘কনস্ক্রিপশন’।

রাশিয়া উপলব্ধি করতে পারছে আমেরিকা থেকে অকাতর সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ বন্ধ হবেনা। এতাবস্থায় পুতিনের আশু ভবিষ্যতের রূপরেখাটি এই রকম—যুদ্ধ-জয় নয়, অচিরে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া নয়, প্রতি সপ্তাহে রুশি সৈন্যের নিহত, আহত, অথবা নিখোঁজ হওয়ার সংখ্যাবৃদ্ধি, অনিশ্চিত স্থিতাবস্থা এমনকী শেষ পর্যন্ত যুদ্ধে হেরে যাওয়ার সম্ভাবনা। মূল প্রশ্নটি হল, যুদ্ধে হারলে পুতিন কি নিজের গদী রক্ষা করতে পারবেন? এই যুদ্ধ তাঁরই একক মস্তিষ্ক-প্রসূত, ফলাফলের দায়িত্বও সম্পূর্ণভাবে তাঁর একার। যুদ্ধে পরাজয় হলে মুখ লুকোনোর জায়গা থাকবেনা তাঁর, প্রবল শক্তিধর দেশ হিসেবে রাশিয়ার ভাবমূর্তি নিমেষে ধুলোয় লুটোবে।যে পুতিন একাদিক্রমে বাইশ বছর ধরে রাশিয়ার রশি নিজের হাতে রেখেছেন, যুদ্ধে হারার মতো বিপর্যয় হলে তিনি কি আর সেটা রক্ষা করতে পারবেন? এমনকী প্রেসিডেন্ট হিসেবে মেয়াদ ফুরোনোর আগে যে সময় তাঁর বাতে আছে তাও কি অনিশ্চিত হয়ে পড়বেনা?

সংক্ষেপে বললে, পুতিনের যুদ্ধে পাশা যদি উল্টে যায় বিরূপ প্রতিক্রিয়ার চেহারাটা কেমন হবে কেউ বলতে পারেনা। কেননা রাশিয়ার যুদ্ধের ইতিহাসে কালো কালিতে লেখা থাকবে একটি সম্পূর্ণ অপ্রয়োজনীয় যুদ্ধে দাদাগিরি দেখাতে গিয়ে তিনি গোটা দুনিয়ার সামনে অযথা রাশিয়াকে বেইজ্জত করে ছেড়েছেন।

অতএব প্রশ্ন পুতিন এবার কী করবেন?

প্রথম পথটি হল এইভাবেই যুদ্ধে অবিচল থাকা, ন্যাটো এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলিতে তেল এবং গ্যাসের সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া এই আশায় যে ইউক্রেনের ক্ষতি ও ইউরোপের কৃচ্ছসাধন কিয়েভকে আলোচনার টেবিলে আসতে বাধ্য করবে। একবার যদি সেটা সম্ভব হয় তাহলে রাশিয়া চেষ্টা করবে ইউক্রেনের যে অঞ্চলগুলিতে রুশভাষীরা সংখ্যাগরিষ্ঠ তাদের স্বায়ত্তশাসন দেওয়া অথবা রাশিয়ার সীমানার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত করে নেওয়া। এই পথের মূল অসুবিধেটা হল এর ফলে ইউক্রেনের ফৌজ অনেকটা সময় পেয়ে যাবে এবং সাফল্যের হাওয়া পিছনে নিয়ে তারা আরও দুঃসাহসী হয়ে উঠবে, রাশিয়াকে সম্মুখীন হতে হবে আরও মারাত্মক প্রতিরোধের।

দ্বিতীয় বিকল্পটি হল সীমিত অভিয়ানের ভেক ঝেড়ে ফেলে পুরোদস্তুর যুদ্ধ শুরু করা এবং গায়ের জোরে যুদ্ধে ইতি টানা। এক্ষেত্রে দেশবাসীরে পাশে রাখতে পুতিন প্রচার শুরু করতে পারেন রাশিয়ার লড়াই আদতে ন্যাটোর সঙ্গে, ইউক্রেন শিখন্ডি মাত্র। শুরু হতে পারে নতুন ‘কনস্ক্রিপশন’, নিহত ও আহত সেনাদের শূন্যস্থানে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে যে কাজটি রুশ সেনাবাহিনীকে আর করতে হয়নি।

তৃতীয় পথটি হল ২০০০ সালে চেচেনদের বিচ্চিন্নতাবাদী আন্দোলন মস্কো যেভাবে ঠান্ডা করে দিয়েছিল কিয়েভেও তা করা। রুশি ফৌজের সেই অভিযানের নাম ছিল ‘ গ্রন্জি অপারেশন।’ একইসঙ্গে কামানের গোলা, ক্ষেপণাস্ত্র ও বোমারু বিমান ব্যবহার করে কিয়েভকে গুঁড়িয়ে দেওয়া। কিন্তু প্রশ্ন হল, গোটা দুনিয়ার চোখের সামনে ইউক্রেনের ক্ষেত্রে এমন বিধ্বংসী সাঁড়াশি আক্রমন কি আদৌ সম্ভব হবে? বলা কঠিন।

সর্বশেষ অস্ত্রটি হল পরমাণু বোমার শরণাপন্ন হওয়া। রাশিয়ার কাছে এই মুহূর্তে অন্তত কয়েক হাজার ‘ট্যাকটিকাল নিউক্লিয়ার ওয়েপন ‘ আছে যা হিরোশিমা-নাগাসাকির সমতুল প্লয় ঘটাবেনা কিন্তু সীমিত ভৌগলিক ভূখন্ডে কার্যকর হবে। সমস্যা হল, একবার এই ব্রহ্মাস্ত্র ব্যবহৃত হলে তার পরিণতি হতে পারে মারাত্মক। এই যুদ্ধ শুরু হওয়ার কিছুদিন পরেই মস্কো থেকে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহারের হুঙ্কার শোনা গিয়েছিল। এখন খারকিভের দশা দেখার পরে আবার তা নতুন করে শোনা যাচ্ছে।

নটে গাছটি মুড়োলে কাহিনীর সারাৎসারটি হবে এই রকম। নিজের বেইজ্জতি এবং দেশের পরাজয় এড়াতে পুতিন কি এমন চরমপন্থার আশ্রয় নেবেন? যদি নেন তাহলে কোথায় কীভাবে তা ব্যবহৃত হবে? সেক্ষেত্রে কিয়েভ অথবা পশ্চিমের দেশগুলির প্রতিক্রিয়াই বা হবে কেমন? নযাটোর কিন সদস্য দেশ আমেরিকা, ব্রিটেন ও ফ্রান্সও পরমাণু শক্তিধর দেশ, ইউক্রেনের যুদ্ধের জন্য তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। পুতিন যদি দেখেন অন্য কোনও উপায়ে এই যুদ্ধকে তিনি কব্জায় আনতে পারছেননা, পরাজয় অবশ্যম্ভাবী, তিনি মরিয়া হয়ে যা খুশি তাই করে ফেলতে পারেন।

কেননা আহত পুতিন বড় বিপজ্জনক।

You may also like

5 comments

SRC September 19, 2022 - 6:12 am

গোটা দুনিয়া জেনে গেলেও এ রাজ্যের মিডিয়ার কাছে এ খবর পৌঁছোয়নি বোধহয়। পূর্বাভাস বিশ্লেষণ তো ছেড়েই দিলাম!

Reply
Rudrani Misra September 19, 2022 - 6:16 am

দারুণ, দারুণ খবর। সকালের এই খবরে মনটা বেশ ভাল হয়ে গেল।

Reply
Nupur Chaudhuri September 19, 2022 - 2:03 pm

পুতিন — স্বখাত সলিলে ডুববেন না আহত বাঘের মত ভয়ংকর হয়ে উঠবেন, তা সময়ই বলবে। তবে বাঘ প্রবৃত্তির তাড়নায় চালিত হয় আর মানুষ অহং, ক্ষমতার দম্ভে মানুষ থেকে শয়তানে পরিণত হয়।

Reply
Partha Chakraborty September 19, 2022 - 5:15 pm

Chintar bishoy.

Reply
কল্যাণ সেনগুপ্ত September 23, 2022 - 2:27 am

কামনা করি ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধ হোক রাষ্ট্রসংঘের উদ্যোগে এবং ক্ষতিপূরণ দিক রাশিয়া, পুতিন ক্ষমতা থেকে সরুক, প্রতিষ্ঠা হোক প্রকৃত গণতন্ত্র। গণতন্ত্র আসুক চীনেও কারণ, চীনের পুঁজিবাদী সমাজতন্ত্রই এখন বিশ্ব গণতন্ত্রের কাছে সর্বাধিক বিপদ।

Reply

Leave a Reply to Nupur Chaudhuri Cancel Reply

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles

All Right Reserved.