Home DRAFT যত বড় চোর, তত বেশি ভোট

যত বড় চোর, তত বেশি ভোট

3 comments

ঝুমা ব্যানার্জি

এভাবে আপনি “চোর চোর” বলে চিৎকার করে শাসককে হেয় প্রতিপন্ন করতে পারেন না। আপনার ঘাড়ে দশটা মাথা থাক, আমার একটাই। আপনি চেঁচান, ঝেড়ে কাশুন, কাঁদুন – আমরা দলে নেই। আমি কিছুতেই চোর- শাসক বলব না, বরং যথাযথ মর্যাদা সহকারে “মহাবিদ্যা প্রকৌশলী” বলেই সম্বোধন করব। বহু কষ্টে হ্যারিকেনের আলোয় দুলে দুলে মুখস্ত করে অজ পাড়াগাঁয়ের ইস্কুল থেকে পড়ে, লাথিঝাঁটা গালমন্দ খেয়ে আজ তিন পয়সা উপার্জন করি। এইসব চোরদের বিরুদ্ধে লিখে, আমার সর্বস্ব খোয়াতে পারব না মশাই।

তবে বিষয়টি কিন্তু অতীব উপাদেয়। আপনি চোরকে দেদার গালিও দেবেন আবার বিপুল ভোটে জয়ীও করবেন। আসল কথা, চোর, ডাকাত, খুনে, বদমাশ এঁদেরও যে এভাবে প্রকাশ্য দিবালোকে মঞ্চে মঞ্চে সংবর্ধনা দেওয়া হতে পারে, শুধু আপনি আমি কেন, এঁরা নিজেরাও স্বপ্নেও ভাবতে পারেনি। দিন সকলেরই আসে। কত মানুষ হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছে ভাবতে পারেন ? যাদের আপনারা পড়া পারে না বলে চিরকাল ফেল করিয়ে করিয়ে এক অস্পৃশ্যতার জালে আটকে রেখেছিলেন, তারা নিজ প্রচেষ্টায় নিজেদের হৃত শ্রী ফিরে পেয়েছে। এই প্রেরণায় বহু ছাত্রছাত্রী অনলাইনে টুকে ভালো নম্বর পেয়ে খারাপ ছাত্রের তকমা ঘুচিয়ে আন্দোলন করে ওপেন বুক এক্সামের দাবি প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছে। যথেষ্ট সঙ্গত দাবি। একটা মিম আমার বেশ মনে ধরেছে, “উনি চুরি করে কোটি কোটি টাকা কামালেন, আর পরীক্ষা হলে সামান্য ঘাড় ঘোরালেই দোষ ?” দেখুন না, এতদিন যাঁরা গর্ত থেকে শাসককে প্রভাবিত করেছেন তাঁরা এখন মান্য তথা প্রতিষ্ঠিত এবং মানুষকে যথাযথভাবে তাঁদের শক্তির উপযোগিতা বোঝাতে সক্ষম হয়েছেন।

এ প্রসঙ্গে প্রমথনাথ বিশীর উক্তিটি স্মর্তব্য, “কর্মীলোক প্রায় দুর্বৃত্ত, আর সৎলোক প্রায়ই অকর্মণ্য, এই বিচিত্র হেরফেরের জন্যই সংসারে বারো আনা দুর্দশা।”

তা মানুষ কী চেয়েছে ? এই দুর্দশা থেকে মুক্তি। কোনোরকমে খেয়েপড়ে বেঁচে থাকা নয়, পৃথিবীটাকে একটু ভালোভাবে ভোগ করা।

এবার আসি শক্তি প্রসঙ্গে। এই শক্তি প্রধানত দুই প্রকার যথা, চিরাচরিত শক্তি এবং অচিরাচরিত। চিরাচরিত শক্তির মধ্যে পড়ে অধুনা অচল বিদ্বান,গুণী,সংস্কৃতি মনস্করা। অচিরাচরিত হল ঋণ খেলাপি,চোর, ডাকাত, খুনে, গুন্ডা, বদমাইশ। চিরাচরিত শক্তিরা যখন দুর্লভ তথা অকেজো হয়ে ওঠে তখন কারা শক্তিমান হয় ? এই অচিরাচরিতগণ। বন্দুকের নল অর্থাৎ ক্ষমতার উৎস এদের হাতেই।

অর্থনীতি বলে, চাহিদা থাকলে বাজার তা পূরণ করবে। নিষেধাজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও কোনো জিনিসের যদি চাহিদা থাকে, বেচাকেনা বাড়বেই।

অচিরাচরিত শক্তিকেও ভোটের স্বার্থে মানুষের কথা ভাবতে হয়। এই শক্তিবাহক দলদিগকে মহাবিদ্যে কোম্পানি বলাই উপযুক্ত। সময়ের দাবি এটাই। সততার প্রতীক তথা সংগ্রামের প্রতীকদেরকেও এই কালচারকে মেনে নিতে হয়েছে এবং পরাক্রম অর্জন করতে এই শক্তিকেই কাজে লাগাতে হয়েছে কারণ শিল্পকারখানাহীন রাজ্যে আয়ের ভাঁড়ারে টান এবং শিল্প স্থাপন এখানে বড়ো কঠিন কাজ। শিল্প কলকারখানা খুলে সেখান থেকে অর্থ উপার্জনের চেয়ে লটারি- মদ- পাচার- চাকরি-ব্যবসা থেকে আয় করা এই অচিরাচরিত শক্তিমানদের পক্ষে সহজ।

ভার্চুয়াল কায়দাকে চুরি বললে ভালো লাগেনা, বলতে হয় কর্পোরেট কালচার। এবং পার্টির হয়ে ক্ষেত্র- সমীক্ষা চালাতে হয় সেই কর্পোরেট সংস্থাকে যেখানে মা মাটি মানুষের কোনো গাঁটছড়া নেই। এঁরা প্রত্যেকেই শুধুমাত্র এক্স ওয়াই জেড। মানুষ কী চায় সেটা খুঁজে আনে এই সংস্থা।ভাবতে হবে,”যত নোট তত ভোট” ব্যাপারটা এত সোজা নয়। অচিরাচরিত শক্তিকেন্দ্রিক শাসন ব্যবস্থায় শিক্ষা মানে একটি বিরাট অপব্যয়, কারণ শিক্ষিত সম্প্রদায়কে যুগোপযোগী কাজে লাগানোর জন্য যথেষ্ট পরিকাঠামো তথা পরিকল্পনা তাৎক্ষণিক অর্থ উৎপাদনের প্রয়োজন মেটাতে অক্ষম। সুতরাং যার দরকার হবে সে শিক্ষা কিনে নেবে এবং চাকরীও কিনে নেবে।

শুধু চাকরি নয়, আমাদের শুয়ে বসে আরাম করে উপার্জনের যেটুকু চাহিদা ছিল , বাজার তা পূরণ করেছে। শক্তিমানদের আয় বেড়েছে, জনগণের শ্রী বেড়েছে, সরকারের স্থায়িত্ব বেড়েছে। এই বৃত্তে নেতা নেত্রী জনতা কর্পোরেট সকলেই নিজ নিজ স্বার্থে জড়িয়ে অচিরাচরিত মহাবিদ্যে সামর্থ্যকে প্রাতিষ্ঠানিক মান্যতা দিয়েছে, জ্ঞানী-বুদ্ধিজীবীরা চোখ বুজেছে। সর্বোপরি, কালো টাকার কিয়দংশ জনগণের হাত ঘুরে করোনা আবহে অর্থনীতির চাকা সচল রেখেছে। সুতরাং মন্দ কি ?

বৎসগণ, খেয়েদেয়ে ঢেকুর তুলে ‘চোর চোর” বলে শুধু গাল দেবেন না। যে দিচ্ছে, তাকে করতালি দিয়ে বা অনুপ্রেরণা জুগিয়ে মাথায় তুলে গারদে ঢোকাবেন না বরং ভালোবাসতে শিখুন অর্থনীতির এই নবতম ধারাটিকে। ইডি ফিডির পক্ষে বিপক্ষে বিভিন্ন পেজে পেজে পাবলিকের মন্তব্য অনুধাবন করে নিজেদেরকে প্রশিক্ষিত করে তুলুন, যাতে জনগণ আপনাদের থেকে আরো বেশি কিছু আশা করতে পারে। ফেয়ার এন্ড লাভলি ঘষে , কালোকে সাদা চোখে দেখে এগিয়ে যান গ্রহ থেকে গ্রহান্তরে নতুন নতুন নতুন কালোমানিকের সন্ধানে। এটি আমার মত ক্ষুদ্র আমিবা মানবের পরামর্শ নয়, মহাবিদ্যে প্রকৌশলী কোম্পানি বিরোধীদের প্রতি বিনীত আবেদন মাত্র। পছন্দ না হলে নিজ গুণে ক্ষমা করে দেবেন, মনে ধরলে মাথায় তুলে নাচবেন না।

You may also like

3 comments

Sisir Chatterjee. August 23, 2022 - 10:44 am

How can u write so wonderfully?
Hats off to ur courage and learning.

Reply
Jhuma banerjee October 16, 2022 - 11:56 am

Thank you so much.

Reply
জ্যোতির্ময় গোস্বামী August 23, 2022 - 1:46 pm

খুব ভালো।

Reply

Leave a Reply to Jhuma banerjee Cancel Reply

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles

All Right Reserved.