Home মহাকাশের দৌড়ে ধনকুবেররা

মহাকাশের দৌড়ে ধনকুবেররা

0 comments

নিজস্ব প্রতিবেদন: দুনিয়াদারিতে তাঁরা সবাই চ্যাম্পিয়ন। প্রতিযোগিতা তাই এ বার মাটি ছেড়ে মহাশূন্যে। একুশ শতকে ধনকুবেরদের শখের পায়রা মহাকাশযান।

দিন কয়েক আগে অ্যামাজনের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও জেফ বেজোস ঘোষণা করেছেন, আগামী মাসেই নিজের সংস্থা ব্লু অরিজিনের তৈরি রকেটে মহাকাশ ছুঁতে উড়ে যাবেন তিনি ও তাঁর ভাই মার্ক। মাত্র ১১ মিনিটের উড়ানে যা টাকা উড়বে, তাতে বিশ্বে ধনীতমের আসনটি হাতছাড়া হবে জেফের। কিন্তু তাতে কী!

একে তো মহাকাশে ওড়া জেফের সারা জীবনের স্বপ্ন ছিল। তার ওপর এই কীর্তিটি স্থাপন করে ফেলতে পারলে তিনিই হবেন মহাকাশে যাওয়া প্রথম স্পেস-বিলিয়নেয়ার। মহাকাশের দৌড়ে ব্লু অরিজিনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী স্পেস-এক্সের মালিক এলন মাস্কের সঙ্গে স্কোর ১-১ করে ফেলার এই তো সুবর্ণ সুযোগ!

এর মধ্যে আবার কানাঘুষো শুরু হয়েছে, ‘প্রথম’ হওয়ার সুযোগটা ছিনিয়ে নিতে নাকি গোপনে তৈরি হচ্ছেন আর এক প্রতিদ্বন্দ্বী, ভার্জিন গ্যালাকটিক্সের প্রতিষ্ঠাতা রিচার্ড ব্র্যানসন। ব্লু অরিজিনের তৈরি নিউ শেফার্ড নামের মহাকাশযানে বেজোস ভাইদের সফরের দিন ঠিক হয়েছে ২০ জুলাই। শোনা যাচ্ছে, ব্র্যানসন নাকি জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহেই তাঁর সংস্থার তৈরি স্পেসশিপ-টু রকেট প্লেনে উড়ান দেওয়ার তোড়জোড় করছেন। যদিও তার জন্য প্রয়োজনীয় মার্কিন উড়ান নিয়ন্ত্রণ সংস্থার ছাড়পত্র আসা বাকি। কাজেই হলিউডি ছবির প্রায় সব উপাদানই মজুত এই স্পেস রেসে।

উত্তেজনার মাত্রাটা ঠিকঠাক আঁচ করতে চাইলে একবার ফিরে যেতে হবে এই শতাব্দীর গোড়ায়। বন্ধু ও কল্পবিজ্ঞান লেখক নিল স্টিফেনসনের সঙ্গে পরামর্শ করে ২০০০ সালে ব্লু অরিজিন সংস্থাটি তৈরি করেন জেফ বেজোস। ব্যক্তিগত বিমানে চড়ে পৃথিবী চক্কর দেওয়া বা বন্ধু-পরিজনদের জন্য আস্ত দ্বীপপুঞ্জ কিনে ফেলার মতোই মহাকাশে বিনিয়োগও তখন নিছক কোটিপতির খেয়াল বলেই মনে হয়েছিল। কিন্তু দু’বছর পর এলন মাস্কের হাত ধরে স্পেস-এক্স সংস্থার জন্মের পরেই শুরু হয় ব্যবসায়িক টক্কর। আর সেই লড়াইয়ে এখনও পর্যন্ত এগিয়ে মাস্কের সংস্থা।

পথিকৃৎ হয়েও বেজোসের সংস্থা ব্লু অরিজিন ২০১৫ সাল পর্যন্ত তেমন সাড়া ফেলতে পারেনি। অন্য দিকে স্পেস-এক্সের সফর শুরু থেকেই নজর কাড়া। জন্মের বছর ছয়েকের মধ্যেই তারা ব্যক্তিগত অর্থসাহায্যে তৈরি প্রথম তরল জ্বালানি চালিত রকেট ফ্যালকন ওয়ানকে কক্ষে স্থাপন করে। আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে প্রথম বেসরকারি অভিযান থেকে শুরু করে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটে নাসার বিজ্ঞানীদের মহাকাশে পাঠানো, গত ১৯ বছরে একের পর এক মাইলস্টোন ছুঁয়েছে স্পেস-এক্স। সরকারি টেন্ডার দখলের লড়াইয়েও ব্লু অরিজিনের কঠিন প্রতিদ্বন্দ্বী তারা। নিউ শেফার্ডের যাত্রা সফল হলে হিসেব বরাবর করার একটা সুযোগ হলেও হতে পারে।

ভার্জিন গ্যালাকটিক্সের গল্পটা আবার একেবারেই আলাদা। তাদের লক্ষ্য মহাকাশ পর্যটন। ২০০৪ সালে তৈরি এই সংস্থা দাবি করেছিল পাঁচ বছরের মধ্যেই রকেট প্লেনে করে মহাকাশে প্রথম পর্যটক পাঠাবে তারা। সেই সময়সীমা পেরিয়ে আরও এক দশক গড়িয়ে যাওয়ার পরেও প্রতিশ্রুতি পূরণ হয়নি। আদৌ কোনও দিন হবে কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ অবস্থায় বেজোসকে টেক্কা দিতে পারলে অন্তত কিছুটা মুখরক্ষা হয়।
এক হিসেবে অবশ্য এঁরা কেউই প্রথম নন। অনেক আগেই বাজিটা মেরে দিয়েছেন ইঙ্গ-আফ্রিকান শিল্পপতি মার্ক শাটলওয়র্থ। মহাকাশে পাড়ি দিতে গেলে যে মহাকাশযানের মালিক হতে হবে, এমন তো কোনও কথা নেই! সেই ২০০২ সালেই শাটলওয়র্থ সোয়ুজ রকেটের টিকিট কেটে বিশ্বের দ্বিতীয় মহাকাশ পর্যটক হিসেবে আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশন থেকে ঘুরে এসেছেন।

বেজোস ভাইরা অতদূর যাচ্ছেন না। আসলে মহাকাশে পাড়ি বললে আমাদের মনে যে ছবিটা ভেসে ওঠে, নিউ শেফার্ডের সফর ঠিক তেমনটা নয়। এই মহাকাশযান কোনো কক্ষপথ ধরবে না, কয়েক মিনিটের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে ফিরে আসবে। শব্দের গতির চেয়ে প্রায় তিনগুণ গতিতে সোজা উপরে উঠে যাবে রকেট। মহাকাশের প্রায় সীমানায় পৌঁছে যাত্রীবাহী একটি ক্যাপসুল রকেট থেকে আলাদা হয়ে যাবে। আরও কয়েক মিনিট ওপরে ওঠার পর ক্যাপসুলটা প্যারাশুটের সাহায্যে ধীরে ধীরে নেমে আসবে মাটিতে। অর্থাৎ, বলা যেতে পারে মহাকাশের সীমা ছুঁয়ে ফিরে আসবেন বেজোসরা। এই পুরো গতিপথে মাত্র তিন-চার মিনিটের জন্য ভারশূন্য অবস্থায় থাকার অনুভূতি টের পাবেন যাত্রীরা। তবু তা নিয়ে উৎসাহ তুঙ্গে। রকেটে জেফ ও মার্ক ছাড়াও একজন তৃতীয় যাত্রী থাকবেন, যিনি সুযোগ পাবেন নিলামের মাধ্যমে। নিলামে নাম নথিভুক্ত করার শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। লাইভ দর হাঁকাহাঁকি শুরুর আগেই তৃতীয় আসনটির দাম উঠেছে ৪৮ লক্ষ ডলার। বেজোস ভাইরাও জানিয়েছেন, সারা জীবনের স্বপ্ন সফল করতে তাঁরা সব দিক থেকে তৈরি। অপেক্ষা ক্লাইম্যাক্সের।

Leave a Comment

Description. online stores, news, magazine or review sites.

Edtior's Picks

Latest Articles

All Right Reserved.